পুঁই শাকের উপকারিতা সম্পর্কিত অবাক করা সকল তথ্য
পুঁই শাকের উপকারিতা সম্পর্কিত অবাক করা সকল তথ্য সম্পর্কে আপনি কি বিস্তারিত ভাবে জানতে চান? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পারবেন এর সাথে গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও আপনি বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন।
পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা জানার পরে আপনি সত্যিই পুঁইশাক খাওয়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবেন। পুঁইশাক এর উপকারিতা এবং এর সম্পর্কে অবাক করা সকল তথ্য জানার জন্য আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কেননা আজকের আর্টিকেলে পুঁই শাকের উপকার ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত ভাবে জানানোর চেষ্টা করব।
পুঁই শাকের উপকারিতা
পুঁই শাকের উপকারিতা ও গুনাগুন অনেক বেশি। গ্রাম গঞ্জের হাটে বাজারে কিংবা বাড়ির আনাচে-কানাচে ব্যাপক পুঁই শাকের সমারোহ রয়েছে। আপনি চাইলেই খুব সহজে এবং স্বল্পদামে পুঁইশাক পেতে পারেন। এটি একটি আদর্শ গাছও বটে। কেননা এ গাছের মধ্যে রয়েছে মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল। যার সবকিছুই আমরা রান্না করে খেতে পারি। এটি যেমন অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার তেমনি এর মধ্যে রয়েছে অনেক ওষুধি গুন। পুঁইশাক অনেকের কাছে ডাটা শাক হিসেবেও পরিচিত।
কেননা পুঁই শাকের ডাটা গুলোও আমরা পুঁই শাকের পাতা ও ফলের মতো অনায়াসে খুব সুস্বাদু খাবার তৈরি করে খেতে পারি। শুধুমাত্র পুঁইশাকের তরকারি রান্না করে খাওয়া যায় তাই নয়। এটি দিয়ে আমরা বৃষ্টির দিনে কিংবা অন্য কোন সময়ে সুন্দর ও সুস্বাদু খিচুড়ি রান্না করে খেতে পারি। যা খিচুড়ির স্বাদ কে আরো বাড়িয়ে তোলে এবং এটিকে করে তোলে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। গ্রাম বাংলার পুঁই এবং হাটে বাজারে পাওয়া রুই মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার।
যে খাবারের কথা শুনলেই মুখে পানি চলে আসে। পুঁইশাক এমন একটি শাক যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। গ্রাম বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পুঁই শাকের চাষ হয়। এটি একটি আঁশ জাতীয় খাবার। এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে এবং এটি আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে ত্বককে মসৃণ রাখতেও সহায়তা করে।
পুঁই শাকের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, লৌহ, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আমিষ, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরোফিল, পটাশিয়াম, ফলিক এসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, কপার সহ আরো অনেক পুষ্টিগুণ যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং অনেক মারাত্মক রোগ থেকে আমাদের শরীরকে মুক্ত রাখে। বুঝতেই পারছেন একটি শাকের মধ্যে যদি এতগুলো পুষ্টি উপাদান থাকে তা আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর।
চলুন এবারে জেনে নেই পুইশাকের কোন উপাদান আমাদের উপকারে আসে। পুঁই শাকের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি আমাদের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া এর মধ্যে কার ভিটামিন এ ত্বকের আর স্কেলপের তেল নিঃসরণ হওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। হলে আমাদের ত্বক হয়ে ওঠে ব্রণ মুক্ত ও লাবণ্যময়। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন কে যেমন আমাদের হাড় গঠনের সহায়তা করে হাড়কে মজবুত করে তেমনি আমাদের ক্যালসিয়ামের ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়।
শুধুমাত্র পুঁই শাকের ডাটা, ফুল কিংবা ফলই নয় এর শিকড়েরও রয়েছে অনেক উপকার। কোন জায়গায় যদি আঘাত লাগে এবং অসন্তোষ জনক ভাবে ফুলে ওঠে তখন আপনি যদি পুঁই শাকের শিকড় ভালোভাবে মিহি করে সে স্থানে লাগাতে পারেন তবে এর দ্রুত উপশম ঘটে। পুঁইশাক এমন একটি শাক যেটি আঁশ ও ফাইবারে ভরপুর। এর মধ্যে থাকা আঁশ ও ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার এর মতো ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করে।
নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়ার মাধ্যমে অর্শ রোগে যে অতিরিক্ত স্রাব হয় সেটি থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় এর পাতা মূত্র কারক এবং এটি গনোরিয়া রোগে খুবই উপকারী। পুঁই শাকের মধ্যে থাকা আয়রন শরীরের রক্তশূন্যতার ঘাটতি পূরণে খুবই সহায়ক। ১০০ গ্রাম পুঁই শাকের মধ্যে দৈনন্দিন চাহিদার প্রায় ১৫ ভাগ আয়রন পাওয়া যায়। সুতরাং নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
আপনারা আরেকটি কথা জানলে হয়তো অবাক হয়ে যাবেন যা আমার জীবনে আমি বাস্তবিক প্রমাণ দেখেছি।একটু গরুর বাচ্চা হওয়ার পরে তার গর্ভের ফুলটি পড়তে সাধারণত অনেক দেরি হয়। কিন্তু বাচ্চা হওয়ার সাথে সাথেই যদি গরুর গলায় একটি পুঁই শাকের ডাটা পেঁচিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় তবে খুব সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যে সেই ফুলটি পড়ে যায়। আপনি চাইলে আপনার বাস্তবিক জীবনে এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে হয়তো আপনার মনে অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। আপনি হয়তো ভাবছেন গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খেলে কোন ক্ষতি হবে কিনা। এতক্ষণে আপনি জানতে পেরেছেন পুঁই শাকের উপকারিতা সম্পর্কে। আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনি পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা এর পুষ্টিগুণ এবং গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে যাবেন।
আগেই বলেছি পুঁইশাক একটি অত্যন্ত পুষ্টি গুনাগুন সমৃদ্ধ খাবার। গর্ভাবস্থায় সবসময়ই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। কেননা আপনি যদি পুষ্টিকর খাবার খান তবে আপনার সন্তান পুষ্টি পাবে এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। পুঁইশাক এমন একটি খাবার যা আপনার শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করবে এবং আপনার শরীরকে শক্তিশালী করে তুলবে। পুঁই শাকের বিচি বা বীজ একটি প্রাকৃতিক ফোলেট উৎপাদনের উৎস হাওয়ায় এটি গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য।
এটি যে শুধু মায়ের জন্য উপকারি নয় বরং গর্ভের বাচ্চার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশেও এটি সহায়ক। নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়ার মাধ্যমে রক্তের ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে মা ও শিশু উভয়ে রক্তশূন্যতার হাত থেকে মুক্তি পাবে। পুঁই শাকের মধ্যে বিদ্যমান ভিটামিন বি সিল্ক, রিভোফ্লাভিন এবং ফলিক এসিড গর্ভস্থ শিশুর নার্ভ কে ভালো রাখে। গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার মাধ্যমে মা ও শিশু দুজনেরই হাড় মজবুত হয়।
পুঁই শাকের বিচির উপকারিতা
পুঁই শাকের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই এটি সম্পর্কে আপনার জানা উচিত। কেননা পুঁই শাকের বীজও অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। পুঁই শাকের বিচিতে থাকা পুষ্টিগুণ রক্তের ফ্যাট বাড়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। শরীরের আয়রনের অভাবকে পূরণ করে। এটি যদি আপনি ঠিকভাবে খেতে পারেন তবে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য জাতীয় সমস্যা দূর হবে।
পাকস্থলী কিংবা অন্য কোন ক্যান্সার রোগ নিরাময়ে এটি আপনাকে সহায়তা করবে। পুঁই শাকের বিচি যে অ্যান্টিউক্লিয়েন্ট গ্লোকোসিনেটের উৎপাদন করে তা ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক সহায়ক। অর্থাৎ আপনার শরীরে যদি ক্যান্সার হয়ে থাকে তবে এর সেল গুলির বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।পুঁই শাকের মধ্যে বিদ্যমান লিপোইক অ্যাসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় ফলে ইন্সুলিনের ভারসাম্যতা বজায় থাকে।
তাই ডায়াবেটিস হলেও আপনি নিশ্চিন্তে পুঁইশাক খেতে পারেন। এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। প্রিয় পাঠক আপনি এতক্ষণে পুঁই শাকের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। এর সাথে আরও জেনেছেন পুঁই শাকের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে। বুঝতেই পারছেন পুইশাক খাওয়ার কত উপকারিতা রয়েছে। এখন আমরা পুঁই শাকের আরো কি কি উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানবো।
পুঁইশাক খেলে কি গ্যাস হয়
পুঁইশাক খেলে কি গ্যাস হয় তা আমাদের অনেকেরই অজানা রয়ে গেছে। যাদের গ্যাস্ট্রিক জাতীয় সমস্যা রয়েছে তারা হয়তো আরও বেশি চিন্তায় পড়ে গেছেন। হয়তো ভাবছেন পুঁই শাকের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে তো জানতে পারলাম কিন্তু এটি খেলে আবার গ্যাস বৃদ্ধি পাবে না তো। তবে চলুন আর দেরি না করে পুঁই শাকের উপকারিতা ও পুঁইশাক খেলে গ্যাস হয় কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেই।
আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন যে নিয়মিত শাক সবজি খাওয়ার দ্বারা শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য জাতীয় সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। অধিকাংশ গ্যাস্টিক জাতীয় সমস্যা হয়ে থাকে পেটের বর্জ্য ঠিকভাবে ক্লিয়ার না হওয়ার কারণে। পুঁইশাক একটি পিচ্ছিল জাতীয় খাবার। এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো আপনার শরীরে হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে। অর্থাৎ আপনি নিয়মিতই খাওয়ার মাধ্যমে বদ হজম থেকে মুক্তি পাবেন।
আপনার শরীর থেকে বজ্র পদার্থগুলো ক্লিয়ার ভাবে বের হয়ে যাবে। এর ফলে আপনি গ্যাস্ট্রিক জাতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কেননা পেট ক্লিয়ার থাকলে গ্যাস্টিক জাতীয় সমস্যা অনেকাংশেই কমে যায়। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় আপনি যদি পুঁইশাক রাখতে পারেন তবে এর মাধ্যমে আপনি পাইলস, হেমোরয়েড, অ্যাসিডিটি সহ এমন অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাবেন যা হয়তো আপনি চিন্তা করতে পারবেন না।
পুঁইশাক খেলে কি ওজন কমে
পুঁইশাক খেলে কি ওজন কমে এটি কি আপনার জানতে ইচ্ছা হচ্ছে? মানুষ ওজন কমানোর জন্য কত রকম পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। পুঁইশাক খাওয়ার মাধ্যমে কিভাবে ওজন কমতে পারে এ নিয়ে আপনার মনে সংশয় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আজকে আমি আপনাদেরকে জানাবো কিভাবে পুঁইশাক খাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাবেন সে সম্পর্কে।
প্রিয় পাঠক আপনি পুঁই শাকের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ইতিমধ্যে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। এর মধ্যে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা আপনার শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাটকে কমিয়ে আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করবে। এটি ভিটামিন সি এবং আয়রন সমৃদ্ধ মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া সহজ করার মাধ্যমে ক্যালরিকে ক্ষয় করতে সহায়তা করে।
আর যখন শরীরের ক্যালরি হয় হবে তখন আপনার শরীরের ওজন আপনা আপনি কমে যাবে। পরিশেষে আপনি অতিরিক্ত মোটা হওয়া থেকে নিজেকে হেফাজত করতে পারবেন। এর জন্য আপনি পুঁই শাকের বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করে খেতে পারেন। যা আপনার শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করবে এবং আপনার শরীরের অনিয়ন্ত্রিত ওজনকে অনেকাংশে কমিয়ে আনবে। তাই আপনি চাইলে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পুঁইশাক খেতে পারেন।
পুঁইশাক খেলে কি এলার্জি হয়
পুঁইশাক খেলে কি এলার্জি হয় এ বিষয়টি আপনারা অনেকেই জানেন না। আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন পুঁই শাকের উপকারিতা ও গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়া উপকারিতা সম্পর্কে। এর সাথে আরো জানতে পেরেছেন পুঁইশাক খেলে গ্যাস হয় কিনা এবং পুঁইশাক খেলে ওজন কমে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত হয়ে জানতে পেরেছেন। এখন আমরা জানবো পুঁইশা খেলে এলার্জি হয় কিনা সে সম্পর্কে।
পুঁই শাকের মধ্যে এলার্জি আছে কিনা তা উপর থেকে দেখে বোঝার কোন বুদ্ধি নেই। কেননা একেক জনের একেক জিনিসের সমস্যা থাকে। তাই আপনার পুঁইশাকে এলার্জি আছে কিনা এটি জানার জন্য আপনাকে পুঁইশাক রান্না করে খেয়ে দেখতে হবে। কথায় আছে প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আপনি পুঁইশাক খাওয়ার পরে যদি দেখেন যে আপনার শরীরে এলার্জির কোন লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
তাহলে আপনি বুঝবেন যে আপনার পুঁইশাকে এলার্জি রয়েছে। এবং তখন আপনি পুঁইশাক খাওয়া বন্ধ করে দেবেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। কিন্তু আপনি যদি দেখেন যে পুঁইশাক খাওয়ার পরে খাওয়ার পরে আপনার শরীরে এলার্জির কোন ইফেক্ট করছে না বা কোন লক্ষণও দেখতে পাচ্ছেন না তখন বুঝতে পারবেন যে আপনার পুঁইশাকে এলার্জি নেই এবং আপনি নিশ্চিন্তে পুঁইশাক খেতে পারবেন।
পুঁই শাকের পুষ্টি উপাদান
পুঁই শাকের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে এত কিছু জানার পরে এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনার পুঁইশাক খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়ার কথা। পুঁইশাক গুল্ম লতা জাতীয় একটি উদ্ভিদ যা আমরা বিভিন্ন ভাবে রেসিপি তৈরি করে রান্না করে খেয়ে থাকি। যেমন চিংড়ি দিয়ে পুঁইশাক কিংবা মিষ্টি কুমড়া দিয়ে পুঁইশাক রান্না করে আমরা খুব তৃপ্তি সহকারে খেয়ে থাকি। আপনারা ইতিপূর্বে পুঁইশাক খায়োর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
এখন আপনারা পুঁই শাকের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন। প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁই শাকের মধ্যে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল। পুঁই শাকের মধ্যে কোন উপাদান কি পরিমাণে আছে আপনি যদি তা না জেনে থাকেন তবে নিজের ছকটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তবে চলুন দেরি না করে জেনে নেই ১০০ গ্রাম পুঁই শাকের মধ্যে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে সে সম্পর্কে।
পুষ্টি উপাদান | পরিমান |
---|---|
ক্যালরী | ২৫ কিলোক্যালরী |
প্রোটিন | ২.৪ গ্রাম |
শর্করা | ২.১ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৩.৭ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৩ গ্রাম |
ভিটামিন এ | ১৭০ আই ইউ |
ভিটামিন সি | ৫১.৮ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ১২০ মাইক্রোগ্রাম |
পানি | ৯১.৮ গ্রাম |
খনিজ পদার্থ | ০.৭ গ্রাম |
জিংক | ০.৫ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ১৯ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৫৫৮ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৫৬ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ৩.২ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১০৪ মিলিগ্রাম |
পুঁই চিংড়ি তৈরির রেসিপি
পুঁই চিংড়ি তৈরির রেসিপি সম্পর্কে আপনি যদি না জেনে থাকেন তাহলে ভালো হবে জেনে নেন কিভাবে পুঁইশাক ও মিষ্টি কুমড়া দিয়ে চিংড়ি রান্না করা যায়। আমরা এতক্ষণে জেনেছি যে পুঁই শাক অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। চিন্তা করেন এর মধ্যে যদি চিংড়ি মাছ এবং মিষ্টি কুমড়া দিয়ে রান্না করা হয় তবে এর স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ আরো কত বৃদ্ধি পাবে। চলুন তবে পুঁই চিংড়ির রেসিপি সম্পর্কে জেনে নেই।
উপকরণঃ
- পুঁইশাক- ১ কেজি
- চিংড়ি মাছ- ২৫০ গ্রাম
- মিষ্টি কুমড়া- ১/২ কেজি
- তেল- পরিমাণ মতো
- পেঁয়াজ কুচি- ১ টেবিল চামচ
- রসুন কুচি- ১ চা চামচ অবশ্যই হবে
- লবণ- পরিমাণ মত
- কাঁচা মরিচ- পরিমাণ মতো
- হলুদ গুঁড়ো- ১ চা চামচ
- জিরা গুঁড়ো- ১/২ চা চামচ
- ধনিয়া গুঁড়ো- ১/২ চা চামচ
যেভাবে রান্না করতে হবেঃ
- প্রথমে মাছগুলোকে বেঁচে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যাতে করে এর মধ্যে কোন ময়লা লেগে না থাকে।
- মিষ্টি কুমড়া ও পুঁইশাক গুলো কেটে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
- এরপরে একটি কড়াইয়ে পরিমাণ মতো তেল ঢেলে দিতে হবে।
- তেল গুলো ঠিকভাবে গরম হওয়ার পরে এর মধ্যে রসুন, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ গুলো হালকা করে ভেজে নিতে হবে যতক্ষণ না এগুলো হলদে ভাব হচ্ছে।
- এখন এতে হলুদ গুঁড়ো, জিরার গুঁড়ো ও ধনিয়া গুঁড়ো দিতে হবে এবং ভালোভাবে নেড়ে এগুলোকে মিক্স করে নিতে হবে।
- এগুলো ভালোভাবে মিক্স হয়ে গেলে এর মধ্যে চিংড়ি মাছ গুলো দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে।
- এগুলো কষানো হয়ে গেলে এর মধ্যে পুঁইশাক এবং মিষ্টি কুমড়া দিয়ে আরো কিছুক্ষণ কষিয়ে নিতে হবে।
- এখন এর মধ্যে পরিমাণ মতো লবণ ও পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
- এরপরে পুঁইশাক ও মিষ্টি কুমড়া ভালোভাবে সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলতে হবে।
- এভাবেই তৈরি হয়ে গেল পুঁইশাক ও মিষ্টি কুমড়া দিয়ে আপনার পছন্দের পুঁই চিংড়ি।
পুঁইশাক এর অপকারিতা
পুঁইশাক এর অপকারিতা সম্পর্কে জানাও ঠিক ততটাই জরুরী যতটা পুঁই শাকের উপকারিতা জেনে পুঁইশাক খাওয়া জরুরি। প্রতিটি জিনিসেরই ভালো ও খারাপ দুটি দিক বিদ্যমান থাকে। পুঁইশাক খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। এতক্ষণ আপনারা পুঁই শাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে। জেনেছেন। চলুন এবারে পুঁই শাকের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেয়া যাক।
- যাদের শরীরে এলার্জি সমস্যা আছে তারা যদি খুব বেশি পরিমাণে পুঁই শাক খায় তবে তা তার জন্য কষ্টের কারণ হবে। এতে শ্বাসকষ্ট ও চুলকানি সহ শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত পুঁইশাক খাওয়ার মাধ্যমে পুঁইশাকের মধ্যে বিদ্যমান অক্সালেট যদি শরীরে অতিরিক্ত হয়ে যায় তবে তা কিডনি ও পিত্তথলির সমস্যা সহ অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- আপনার যদি শরীরের মধ্যে এজমা বা শ্বাসকষ্ট জাতীয় কোন সমস্যা থেকে থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ভাবেই অতিরিক্ত পরিমাণে পুঁইশাক খাওয়া ঠিক নয়। এতে আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- আপনি যদি মাত্রাতিরিক্ত পুঁইশাক খান তবে এর মধ্যে থাকা পিউরিন আপনার শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা কে বাড়িয়ে দিতে পারে। যা থেকে আপনি গাইট কিংবা কিডনি সমস্যায় ভুগতে পারেন।
লেখক এর মন্তব্যঃ পুঁই শাকের উপকারিতা সম্পর্কিত অবাক করা সকল তথ্য
পুঁই শাকের উপকারিতা সম্পর্কিত অবাক করা সকল তথ্য সম্পর্কে আজকে আপনাদেরকে বিস্তারিত ভাবে জানানোর জন্য চেষ্টা করেছি। পুঁই শাকের পুষ্টিগুণ জেনে যাতে আপনারা আপনাদের খাদ্য তালিকায় পুঁইশাক রাখতে পারেন সে উদ্দেশ্যে আজকে আর্টিকেলটি লিখেছি। তবে অতিরিক্ত কোন জিনিসই ভালো নয়। তাই শরীরের মধ্যে কোন সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই পুঁইশাক খাবেন।
আজকে আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং এর থেকে কোন উপকার পেয়ে থাকেন তবে তা অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিন। যাতে করে তারাও এ থেকে উপকার পেতে পারে। এমন সব তথ্যবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। সকলের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। এতক্ষণ সময় দিয়ে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
এক্সপার্ট আইটি 24 এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url